Tuesday, July 25, 2017

খিচুড়ি নাকি ইলিশ পোলাও

খিচুড়ি নাকি ইলিশ পোলাও

আতাউর রহমান




রিমঝিম বৃষ্টিতে মনটা উতলা থাকে। ঘুম ঘুম ভাব কাজ করে। গতানুগতিক খাবারের প্রতি এক ধরনের অনীহা কাজ করে। এমন দিনে কারো পছন্দ ভুনা খিচুরি। কারো পছন্দ ইলিশ পোলাও।
পুষ্টিবিদরা বলেন, দুটোই মুখরোচক খাবার। রয়েছে পুষ্টিগুণও। এই দুটো তৈরির পদ্ধতি ও কোনটায় কী কী খাদ্যগুণ রয়েছে, তা নিয়ে এই ফিচার।
ক.ভুনা খিচুড়ি
অবিরাম ঝরে চলেছে বৃষ্টি। এমন বৃষ্টিমুখর দিনে গরম গরম ভুনা খিচুড়ি না হলে কি চলে? আলুভাজা, ইলিশ মাছ ভাজা, পেঁয়াজ কুচি অথবা ঝাল গরুর মাংস দিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার ভুনা খিচুড়ি।
উপকরণ : মুগ ডাল- ১ কাপ, বাসমতি চাল- ২ কাপ, ঘি অথবা মাখন- আধা কাপ,  পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, কাঁচামরিচ ২টি, রসুন বাটা ২ চা চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ,পচ হলুদ গুঁড়া- ১ চা চামচ, ভাজা জিরা গুঁড়া- ১ চা চামচ, তেজপাতা ১টি, লবঙ্গ- ২/৩টি, দারুচিনি ২/৩টি, গরম পানি ৫ কাপ, লবণ- স্বাদ মতো।

প্রস্তুত প্রণালি : চাল ও ডাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। চুলায় মাঝারি আঁচে পাত্র বসিয়ে ঘি/মাখন দিয়ে পেঁয়াজ ভাজুন। একে একে সব মসলা, চাল ও ডাল দিয়ে নিন। ২ মিনিট ভেজে গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিন পাত্র। চাল-ডাল সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ভুনা খিচুড়ি। সঙ্গে দিতে পারেন গরুর কিংবা মুরগীর মাংস।
ইলিশ মাছের খিচুড়ি
উপকরণ : ইলিশ মাছ ১টি, রসুন বাটা ১ চা. চামচ, পোলাও চাল ২ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ২ চা. চামচ, মসুর ডাল ১/২ কাপ, আদা বাটা ১/২ চা. চামচ, পেঁয়াজ বাটা ২ টে. চামচ, ধনে ১ চা. চামচ, হলুদ ১ চা. চামচ, নারকেলের দুধ ১/২ কাপ, মরিচ ১ চা. চামচ, কাঁচামরিচ ৫/৬টি, এলাচ ২টি, তেল ১/২ কাপ, দারুচিনি ২ টুকরো, লবণ পরিমাণমত।
প্রণালী : মাছ বড় টুকরো করে কাটতে হবে। মাছে সামান্য লবণ ও হলুদ দিয়ে মেখে রাখতে হবে। হাঁড়িতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভেজে লাল হলে সব মসলা দিয়ে কষাতে হবে। কিছুক্ষণ পর মাছ দিয়ে কষাতে হবে। মাছ কষানো হলে সাবধানে তুলে রাখতে হবে। ওই মসলাতে এবার চাল ও ডাল দিয়ে কষিয়ে মাপমত গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। খিচুড়ির পানি কমে এলে তুলে রাখা মাছগুলো বিছিয়ে নারকেলের দুধ দিয়ে কম আঁচে ১৫ মি. দমে রেখে নামাতে হবে।

খাদ্যগুণ
১. খিচুড়িতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি, কারণ খিচুড়িতে ডাল থাকে।
২. খিচুড়িতে সবজি দেয়া হয়। সে কারণে সবজি কম খাওয়া হলেও খিচুড়িতে থাকার কারণে সেটা খাওয়া হয়। বিশেষ করে যে শিশুরা সবজি খেতে চায় না, তাদের সবজি খিচুড়ি খাওয়ানো যেতে পারে।
৩. খিচুড়িতে চালের ও ডালের অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে বলে যাদের ওজন বেশি, তাদের খাওয়া উচিত নয়।
৪. খিচুরিতে ক্যালরি বেশি থাকায় বৃষ্টির দিনে গায়ে তাপ বাড়ায়, এতে প্রশান্তি কাজ করে।
খ. ইলিশ পোলাও
ভারী বর্ষনের দিনে ইলিশ পোলাওয়ের নাম শুনলেই জিবে জল এসে যায়। বৃষ্টির দিনে এ খাবারের লোভ সামলানো দায়।
ইলিশের ব্যঞ্জন তৈরি
ইলিশ মাছ বড় ৮ টুকরা। টকদই ২ টেবিল-চামচ। পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ। পেঁয়াজবাটা ১/৪ কাপ। আদা ও রসুন বাটা ১ টেবিল-চামচ করে। লবণ স্বাদ মতো। পাপরিকা বা লালমরিচ-গুঁড়া ১ চা-চামচ। সরিষার তেল ১/৪ কাপ। ঘি ২ টেবিল-চামচ। কাজুবাদাম-বাটা ১ টেবিল-চামচ। নারিকেলের দুধ ১ কাপ কাঁচামরিচ ১০টি। চিনি ১ চা-চামচ। একটি কড়াইতে তেল ও ২ টেবিল-চামচ ঘি গরম করে তাতে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন বাটা, লালমরিচ-গুঁড়া, চিনি ও লবণ ১/৪ কাপ পানি দিয়ে কষাতে হবে। মাছের ট‚করাগুলো মসলায় ছেড়ে নারিকেলের দুধ মিশিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে রান্না করতে হবে ১৫ মিনিট। তারপর বাদামবাটা, টকদই, পেঁয়াজ-বেরেস্তা, কাঁচামরিচ মিশিয়ে মাছে দিয়ে আরও ১০ মিনিট অল্প তাপে রান্না করে চুলা বন্ধ করে দিন। মাছের টুকরাগুলো আলাদা তুলে রাখুন।

ইলিশ পোলাও তৈরি
পোলাওয়ের চাল ৪ কাপ। পেঁয়াজকুচি ১ টেবিল-চামচ। আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ।  গুঁড়াদুধ ১/৪ কাপ। ঘি ২ টেবিল-চামচ। লবণ পরিমাণ মতো। পানি ফুটানো ৫ কাপ। মাছের স্টক ১ কাপ (২ কাপ পানিতে অল্প লবণ ও ইলিশ মাছের মাথা ভেঙে অল্প আঁচে জ্বাল দিয়ে ১ কাপ করে নিতে হবে)। হাঁড়িতে ঘি গরম করে পেঁয়াজকুচি ভেজে চাল ও আদা দিয়ে আরও দুই মিনিট ভাজুন। তারপর ফুটন্ত পানি, মাছের স্টক, মাছের ঝোল, গুঁড়াদুধ ও লবণ দিয়ে ফুটতে দিন। পানি কয়েকবার ফুটে প্রায় টেনে গেলে কিছু কাঁচামরিচ দিয়ে নাড়ুন। ঢেকে অল্প আঁচে (দমে) রাখুন। ২০ মিনিট পর পোলাও চুলা থেকে নামিয়ে নিন। ঢাকনা দেয়ার পরে কোনোভাবেই খুলবেন না এবং পোলাও নাড়বেন না। পোলাও ঝরঝরা হওয়ার জন্য এটি খুব জরুরি। কিছু পোলাও হাঁড়ি থেকে উঠিয়ে মাছের টুকরাগুলো পোলাওর উপর বিছিয়ে তার উপর ঘি ছিটিয়ে আবার ওঠানো পোলাও দিয়ে ঢেকে দমে ১০ মিনিট রাখতে হবে। বেরেস্তা দিয়ে পরিবেশন করুন।

পোলাওয়ের খাদ্যগুণ
১. পোলাওতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক থাকে। কারণ এটি ঘি বা তেল দিয়ে রান্না করা হয়।
২. যাদের হার্টের সমস্যা, তাদের ঘি অথবা ডালডার বদলে তেল দিয়ে পোলাও খাওয়া উচিত।
৩. অনেক সময় সবজি দিয়েও পোলাও রান্না করা হয়। সে ক্ষেত্রে পোলাওয়ের খাদ্যগুণ অনেক বেড়ে যায়।
৪. তবে বৃষ্টি না থাকলে গরমকালে পোলাওটা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।

No comments:

Post a Comment

সামাজিক বৈষম্যের বেদীতে বলি এক চিত্রনায়িকা পরীমনি?

  হঠাৎ করেই চলচিত্রের নায়িকা পরীমনিকে আটক করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব অভিযান চালিয়েছে তার বাড়িতে। অভিযানের আয়োজন দেখে...